আমি চঞ্চল হে,
আমি সুদূরের পিয়াসি।
দিন চলে যায়, আমি আনমনে তারি
আশা চেয়ে থাকি বাতায়নে--
ওগো, প্রাণে মনে আমি যে তাহার পরশ
পাবার প্রয়াসী॥
ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর,
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি--
মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই
সে কথা যে যাই পাশরি॥
আমি উন্মনা হে,
হে সুদূর, আমি উদাসী॥
রৌদ্র-মাখানো অলস বেলায় তরুমর্মরে
ছায়ার খেলায়
কী মুরতি তব নীল আকাশে নয়নে উঠে
গো আভাসি।
হে সুদূর, আমি উদাসী।
ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর,
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি--
কক্ষে আমার রুদ্ধ দুয়ার সে কথা
যে যাই পাশরি॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1309
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1902
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসি।
একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি
একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি--
তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী।
কিছু পলাশের নেশা, কিছু বা চাঁপায় মেশা,
তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙে রসে জাল বুনি॥
যেটুকু কাছেতে আসে ক্ষণিকের ফাঁকে ফাঁকে
চকিত মনের কোণে স্বপনের ছবি আঁকে।
যেটুকু যায় রে দূরে ভাবনা কাঁপায় সুরে,
তাই নিয়ে যায় বেলা নূপুরের তাল গুনি॥
-
রাগ: কালাংড়া
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২ ফাল্গুন, ১৩৩৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
পাতার ভেলা ভাসাই নীরে, পিছন-পানে চাই নে ফিরে ॥
পাতার ভেলা ভাসাই নীরে,
পিছন-পানে চাই নে ফিরে ॥
কর্ম আমার বোঝাই ফেলা,
খেলা আমার চলার খেলা।
হয় নি আমার আসন মেলা,
ঘর বাঁধি নি স্রোতের তীরে ॥
বাঁধন যখন বাঁধতে আসে
ভাগ্য আমার তখন হাসে।
ধুলা-ওড়া হাওয়ার ডাকে পথ
যে টেনে লয় আমাকে--
নতুন নতুন বাঁকে বাঁকে
গান দিয়ে যাই ধরিত্রীরে ॥
-
রাগ: পিলু-বৃন্দাবনী সারং
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): চৈত্র, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1926
রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
এতদিন তুমি সখা, চাহ নি কিছু
এতদিন তুমি সখা, চাহ নি কিছু;
নীরবে ছিলে করি নয়ন নিচু।
রাজ-অঙ্গুরী মম করিলাম দান,
তোমারে দিলাম মোর শেষ সম্মান।
তব বীর-হাতে এই ভূষণের সাথে
আমার প্রণাম যাক তব পিছু পিছু।
শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
কত যে তুমি মনোহর মনই তাহা জানে,
কত যে তুমি মনোহর মনই তাহা জানে,
হৃদয় মম থরোথরো কাঁপে তোমার গানে॥
আজিকে এই প্রভাতবেলা মেঘের সাথে রোদের খেলা,
জলে নয়ন ভরোভরো চাহি তোমার পানে॥
আলোর অধীর ঝিলিমিলি নদীর ঢেউয়ে ওঠে,
বনের হাসি খিলিখিলি পাতায় পাতায় ছোটে।
আকাশে ওই দেখি কী যে—
তোমার চোখের চাহনি যে।
সুনীল সুধা ঝরোঝরো ঝরে
আমার প্রাণে॥
শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
যদি তারে নাই চিনি গো সে কি আমায় নেবে চিনে
যদি তারে নাই চিনি গো
সে কি আমায় নেবে চিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে--
জানি নে জানি নে॥
সে কি আমার কুঁড়ির কানে
কবে কথা গানে গানে,
পরান তাহার নেবে কিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে--
জানি নে, জানি নে॥
সে কি আপন রঙে ফুল রাঙাবে।
সে কি মর্মে এসে ঘুম ভাঙাবে।
ঘোমটা আমার নতুন পাতার হঠাৎ
দোলা পাবে কি তার। ,
গোপন কথা নেবে জিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে--
জানি নে, জানি নে॥
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
মনে রবে কি না রবে আমারে
সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে,
অকারণে গান গাই॥
চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে
যেতে যদি আসি কাছাকাছি
তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি
দেখিতে যে চাই--
তাই অকারণে গান গাই॥
ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া
ফাগুনের অবসানে--
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া,
আর কিছু নাহি জানে।
ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ,
গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,
যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই--
তাই অকারণে গান গাই॥
-
রাগ: খাম্বাজ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ ফাল্গুন, ১৩৩৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ মার্চ, ১৯২৭
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে,
কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে,
তখন তুমি ছিলে না মোর সনে॥
যে কথাটি বলব তোমায় ব’লে কাটল জীবন নীরব চোখের জলে
সেই কথাটি সুরের হোমানলে উঠল জ্বলে
একটি আঁধার ক্ষণে—
তখন তুমি ছিলে না মোর সনে॥
ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে
সেই কথাটি তোমায় যাব বলে।
ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে,
পাখির গানে আকাশ গেল পূরে,
সেই কথাটি লাগল না সেই সুরে যতই
প্রয়াস করি পরানপণে—
যখন তুমি আছ আমার সনে॥
বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান,
আমি হেথায় থাকি শুধু
গাইতে তোমার গান,
দিয়ো তোমার জগৎসভায়
এইটুকু মোর স্থান।
আমি তোমার ভুবন-মাঝে
লাগি নি নাথ, কোনো কাজে--
শুধু কেবল সুরে বাজে
অকাজের এই প্রাণ।
নিশায় নীরব দেবালয়ে
তোমার আরাধন,
তখন মোরে আদেশ কোরো
গাইতে হে রাজন্।
ভোরে যখন আকাশ জুড়ে
বাজবে বীণা সোনার সুরে
আমি যেন না রই দূরে
এই দিয়ো মোর মান।
শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
DinGuli Mor Sonar Khanchay - দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা--
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
-
রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1325
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918